আল্লামা হাফেজ মুফতি আহমদুল্লাহ সাহেব দা.বা.
জন্ম: ১৪ রবিউস ছানি, ১৩৬১ হিজরি মোতাবেক ১ মে, ১৯৪১ ইং, সোমবার চট্টগ্রাম জেলার পটিয়া থানার অন্তর্গত নাইখাইন মাজহারুল্লাহ মুন্সী বাড়ি এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম হযরত মাওলানা ঈসা সাহেব রহ.।
লেখাপড়া:
তার ছাত্রজীবন শুরু হয় পিতা মরহুমের সান্নিধ্যে। তার কাছে কোরআন মাজিদের নাজেরা শেষ করেন মাত্র ৭ বছর বয়সে। তারপর প্রাচীণতম ঐতিহ্যবাহী দ্বীনি শিক্ষা নিকেতন জামিয়া আরাবিয়াহ জিরি মাদ্রাসায় ১৩৬৮ হিজরিতে হেফজ বিভাগে ভর্তি হয়ে ১৩৭১ হিজরিতে মাত্র ১০ বছর বয়সে হেফজ সমাপ্ত করেন। তারপর ঐ মাদ্রাসায় দরসে নেজামির প্রথম স্তর থেকে দাওরায়ে হাদীস পর্যন্ত শেষ করেন। প্রত্যেক জামাতের প্রতিটি পরীক্ষায় প্রথম স্থান লাভ করেন। সেখানে তার বিশেষ উত্তাদদের মধ্যে ছিলেন হযরত আল্লামা আবুল খায়ের রহ. প্রমূখ। ১৩৮৩ হিজরি সনে স্বদেশে পড়ালেখা শেষ করে উচ্চতর শিক্ষার জন্য পাড়ি জমান পাকিস্তানে। ১৩৮৪ হিজরি সনে তিনি ভর্তি হন পাকিস্তানের প্রসিদ্ধ শহর লাহোরের বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান জামিয়া আশরাফিয়া লাহোরে। সেখানে তিনি পুনরায় দাওরায়ে হাদিস পড়েন। সেখানেও বার্ষিক পরিক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। ওখানে তাঁর উত্তাদদের মধ্যে রয়েছেন দারুল উলুম দেওবন্দের শাইখুত তাফসীর আল্লামা ইদরীস কান্দলভী রহ., শাইখুল কুল ফিলকুল আল্লামা রসূল খান রহ. প্রমুখ উল্লেখযোগ্য। এতটুকুতেই তিনি ক্ষান্ত হননি। আরো উচ্চতর শিক্ষা লাভের আগ্রহে তিনি চলে যান পাকিস্তানের মুলতান শহরের সুপ্রসিদ্ধ মাদ্রাসা খাইরুল মাদারিসে। সেখানে তিনি ভর্তি হয়ে প্রখ্যাত উস্তাযুল মা’কুলাত হযরত আল্লামা মুহাম্মদ শরীফ কাশ্মীরীর কাছে “ফুনুনাতে আলিয়া” মুকাম্মিল করেন। এবং সেখানেও বার্ষিক পরিক্ষায় ১ম স্থান অর্জন করেন। উল্লেখ্য, সেখানকার শিক্ষকগণ তার বিরল মেধা, সাধনা ও কৃতিত্ব দেখে তাকে বাঙ্গাল কা খরকে আদত (বাংলার বিরল মেধাবী কৃতিত্ব) উপাধিতে ভূষিত করেন এবং মাদ্রাসা-কর্তৃপক্ষ তার মেধা ও কৃতিত্বে মুগ্ধ হয়ে মাদরাসার বিশাল বার্ষিক মাহফিলে বিশেষ পুরস্কার ও ইসলামি দর্শনের বিশেষ দস্তার (পাগড়ি) প্রদান করেন।
এতেও তাঁর জ্ঞান-পিপাসা নিবারিত হয়নি। অদৃশ্য জ্ঞানস্পৃহা তাকে আবার নিয়ে চলল পাকিস্তানের প্রসিদ্ধ ইসলামি বিদ্যাপীঠ দারুল উলুম করাচিতে। ১৩৮৭ হিজরি সনে তিনি দারুল উলুমে ফতোয়া বিভাগে ভর্তি হন এবং মুফতিয়ে আজম আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ শফী রহ. এর কাছে ফতোয়ার কোর্স সমাপ্ত করেন। অধ্যাপনা: ১৩৮৮ হি. সনে শাওয়াল মাসে তিনি বাংলাদেশে প্রত্যাবর্তন করেন। দেশে ফিরে তিনি জ্ঞানের মাতৃক্রোড় ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জিরি ইসলামিয়া আরবিয়ায় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। সেখানে তিনি সুদীর্ঘ ২৩ বছর দরসে নেজামির প্রায় প্রত্যেক বিষয়ে কৃতিত্বের সাথে শিক্ষাদান করেন। দীর্ঘ তেইশ বছরের শেষের দিকে তিনি শাইখুল হাদিস পদে উন্নীত হন। ১৪১১হি, সনে জিলক্বদ মাসে জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার পরিচালক, শাইখুল আরব ওয়াল আজম, হযরত শাহ্ মুহাম্মদ ইউনুস সাহেব রহ. এর বিশেষ অনুরোধে জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ার মুহাদ্দিস ও মুফতি হিসেবে নিযুক্ত হন। সেই থেকে অদ্যবধি তিনি আল্লাহর অসীম করুণায় এ খেদমতে নিয়োজিত আছেন। আধ্যাত্মিকতা: ইলমে বাতেনি বা আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে প্রথমে তিনি পাকিস্তানের করাচিতে ফতোয়ার কোর্স শেষ করার সময় মুফতিয়ে আজম আল্লামা শফী রহ. এর মোবারক হাতে বাইআ’ত গ্রহণ করেন। অতঃপর দেশে ফিরে আসেন। ইতোমধ্যে মুফতিয়ে আজম রহ, ইন্তেকাল করেন। অতঃপর ১৩৯৯ হিজরির রমজান মাসে বাংলার যুগশ্রেষ্ঠ বুযুর্গ আল্লামা মুহাম্মদুল্লাহ হাফেজ্জী হুজুর রহ. এর হাতে বাইআ’ত গ্রহণ করেন। বাইআ’ত গ্রহণের ২ বছর পর ১৪০১ হিজরির রমজান মাসে তার গুরুত্বপূর্ণ ও মূল্যবান নসিহতসহ ইযাজত ও খেলাফত দান করেন। কিতাব রচনা: দরসে নেজামির কঠিন ও গুরুত্বপূর্ণ কিতাবাদির সুনিপুণ পাঠদান এবং ওয়াজ ও নসিহতের অবিরাম ব্যস্ততার ফলে লেখালেখির অসাধারণ প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও লেখালেখির পেছনে তত বেশি সময় ব্যয় করেননি। তাঁর বিরামহীন ব্যস্ততা সত্ত্বেও তিনি জ্ঞানপিয়াসীদের জন্য উপহার দিয়েছেন একগুচ্ছ অমূল্য পুস্তক, তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি
গ্রন্থ:
১. ছহিহ বোখারি শরিফের (ক্বালা বা’দুন্নাস) এর ব্যাখ্যা ও হানাফীদের পক্ষ থেকে তার যুক্তিসঙ্গত উত্তরসম্বলিত গ্রন্থ।
২. মাশায়েখে চাটগাম (উর্দু-বাংলা)
৩. তাজকেরাতুন নূর।
৪. তাসকিনুল খাওয়াতির ফী শরহিল আশবাহি ওয়ান্নাযাযির।
৫. ইসলামের দৃষ্টিতে শেয়ার বাজার ও মাল্টিলেবেল মার্কেটিং। النفحات الاحمدية في الخطبات المنبرية ..
৭. একের ভিতর সাত। এছাড়াও হযরতের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে বিভিন্ন ভ্রান্ত মতবাদের মুখোশ উন্মোচনে লিখিত অনেক পুস্তিকা ও প্রবন্ধ রয়েছে।