আল্লামা মুফতি একরাম হোসাইন ওয়াদূদী
জন্ম:
বিদগ্ধ আলেমেদীন, ছাত্রনন্দিত শিক্ষক, শ্রুতিমধুর বক্তা, একরাম হোসাইন ওয়াদুদী দা.বা. ১৯৬৭ ইংরেজীতে চট্টগ্রাম সাতকানিয়া থানার অন্তর্গত তুলাতলী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেন। তাঁর পিতা মাওলানা মুহাম্মদ হোসাইন রহ. বিনয় ও নম্রতায় ছিলেন অতুলনীয়। তাকওয়া ও খোদাভীতিতেও ছিলেন উচ্চ আসনে সমাসীন। ১৩৯৮ হি. জুমাবার ৪৬ বছর বয়সে মহান প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে এই নশ্বর পৃথিবীকে বিদায় জানান। হযরতের পিতামহ শায়খ মাওলানা আব্দুল ওয়াদুদ তুলাতলী রহ. দেশের সে সব মুহাদ্দিসীনে কেরামের মধ্যে অগ্রগণ্য, যাদের বদৌলতে আজ বাংলার ঘরে ঘরে ইলমে হাদিসের আলো জাজ্বল্যমান। তাঁর কাছ থেকে হাদিস অর্জন করে ধন্য হয়েছেন কুতুবে আলম শায়খ আল্লামা মুফতী আজিজুল হক রহ.। এমন রক্ত থেকেই জন্ম নেন বিরল প্রতিভাধর, বিদগ্ধ আলেমেদ্বীন, আল্লামা মুফতী একরাম হোসাইন সাহেব দা.বা.।
শিক্ষাজীবন:
তিনি প্রাথমিক শিক্ষা লাভ করেন মাদরাসায়ে মুখলেছিয়া, পুকুরিয়া এবং মাদ্রাসায়ে রশিদিয়া বশরত নগরে। অতঃপর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষার জন্য ১৯৮০ ইং সনে তিনি জামিয়া ইসলামিয়া পটিয়ায় ভর্তি হন। ১৯৮৬ ইং সনে তিনি অত্যন্ত খ্যাতি ও কৃতিত্বের সাথে দাওরায়ে হাদিস পাশ করেন। ঈর্ষণীয় মেধা ও স্মরণশক্তির অধিকারী আল্লামা মুফতি একরাম হোসাইন ওয়াদুদী সাহেব প্রতিটি ক্লাসে কৃতিত্বের পরিচয় দিয়েছেন। জ্ঞান-বিজ্ঞানের বিভিন্ন শাখা-প্রশাখায় পাণ্ডিত্য ও বিদক্ষতা লাভ করেন। তাঁর উস্তাদদের মধ্যে আল্লামা ইমাম আহমদ রহ., আল্লামা আনযার শাহ কাশ্মীরী রহ. আল্লামা আব্দুস সামাদ আমিরাবাদী (খাদেমে খাস আল্লামা আশরাফ আলী থানবী রহ.), আল্লামা ইসহাক রাঙ্গুনবী রহ., আল্লামা ইসহাক কানাইমাদারী রহ. আল্লামা শাহ্ আইয়ুব রহ. আল্লামা মুফতী আব্দুর রহমান রহ., আল্লামা শাহ মুফতী আব্দুল হালীম বোখারী রহ. শাইখুল মাকুলাত আল্লামা ক্বারী ইলিয়াস দা.বা. প্রমুখ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
তাঁর প্রতি তাঁর উস্তাদদের প্রশংসা:
১। ফকিহুল মিল্লাত মুফতি আবদুর রহমান রহ. তাঁর নাতি মাওলানা আছেমকে বলেছিলেন, তোমার আবু দাউদের উস্তাদ মাওলানা একরাম হোসাইন ওয়াদুদী ছাত্র জীবনে খুব ভালো ছাত্র ছিল। ২। ক্বারী ইলিয়াস সাহেব হাফি., মুফতি শামসুদ্দীন জিয়া সাহেব হাফি. কে বলেছিলেন, পটিয়া মাদ্রাসায় আমার একটা উল্লেখযোগ্য ছাত্র আছে। যার নাম মাওলানা একরাম হোসাইন ওয়াদুদী হাফি.। ৩। আল্লামা আইয়ুব সাহেব (রহ.) বলেছিলেন, মাওলানা একরাম হোসাইন কঠিন কঠিন কিতাব যেগুলো অন্যান্য উস্তাদরা পড়াইতে পারেনা সেগুলো খুব সুন্দরভাবে পড়াইতে পারেন। অধ্যাপনা: প্রখ্যাত এ আলেমেদ্বীন কর্মজীবন শুরু করেন শিক্ষকতার মধ্য দিয়ে। প্রথমে তিনি মাদরাসায়ে হেমায়েতুল ইসলাম কৈয়গ্রামে শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। অতঃপর ১৪০৭ হি. সনে তিনি চলে যান বগুড়া জামিল মাদরাসায়। তিনি সেখানে পাঁচ বছর ইলমে হাদিস ও আকায়েদের জ্ঞান বিস্তার করেন। অতঃপর ১৪১২ হিজরীতে দারুল মারিফে মুহাদ্দিস হিসেবে নিযুক্ত হন। সেখানে এক বছর শিক্ষকতা করার পর ১৪১৩ হি. সনে স্বীয় ‘জ্ঞানের মাতৃক্রোড়” জামিয়া পটিয়ায় শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। এবং এখানে দরসে নিজামীর অনেক দুর্বোধ্য ও জটিল কিতাবসমূহের পাঠদান করছেন। কিতাবের দুর্বোধ্য ও কঠিন বিষয়সমূহকে সহজ ও সংক্ষেপে বুঝানোর বিস্ময়কর দক্ষতা হযরতের অনন্য বৈশিষ্ট্যসমূহের মধ্যে অন্যতম। বর্তমানে তাঁর পাঠদানকৃত কিতাবের মধ্যে রয়েছে: সিহাহ সিত্তার প্রসিদ্ধ হাদিস গ্রন্থ, আবু দাউদ শরীফ ১ম খন্ড, শরহে আকায়েদ, মায়বুজি ইত্যাদি। আধ্যাত্মিকতা: তিনি হাকিমুল উম্মত আশরাফ আলী থানবী রহ. এর বিশিষ্ট খলিফা হযরত শাহ্ আবরারুল হক রহ. এর হাতে বাইয়াত গ্রহণ করেন। বর্তমানে তিনি মা’রেফাত ও তাসাউফের পথে কঠোর সাধনা করে যাচ্ছেন। উল্লেখ্য যে, হুজুরের দাওরায়ে হাদিস অধ্যায়নের বছর খতমে বুখারীর অনুষ্ঠানে হযরত শাহ্ আবরারুল হক রহ. উপস্থিত ছিলেন। তিনি অনির্দিষ্টভাবে কোনো একজন ছাত্রকে কুরআন তেলাওয়াত করতে বললেন। যেহেতু তিনি তাজবীদ ও মাখরাজের প্রতি অধিক লক্ষ্য রাখতেন, তাই কেউ তেলাওয়াত করার জন্য উঠতে সাহস করলনা। তখন হযরত বললেন, সুন্নত অনুযায়ী আমি ডানদিক থেকে কাউকে তেলাওয়াত করার জন্য আদেশ করছি। হুজুর ডানদিকে ছিল। এমতাবস্থায় হুজুর সাহস করে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং সূরায়ে নাস তেলাওয়াত করে শুনালেন। হযরত আবরারুল হক রহ. হুজুরের তেলাওয়াত শুনে অত্যন্ত মুগ্ধ ও খুশি হলেন। রচনাবলী পাঠদানের পাশাপাশি লেখালেখির জগতেও রয়েছে হযরতের সরব পদচারণা।
তাঁর রচনাবলীর মধ্যে রয়েছে:
১. তুহফাতুল ফাওয়ায়েদ ফি হল্লি শরহিল আক্বায়েদ (শরহে আক্বায়েদের ব্যাখ্যাগ্রন্থ),
২. আল বয়ান ফি তাফসীরে উম্মুল কুরআন,
৩. আননূরুন্নামী ফি হল্লি শরহিল জামী (শরহে জামী ইসমের ব্যাখ্যাগ্রন্থ),
৪. আল-ইরফান,
৫. তুহফাতুত তালীদ,
৬. নিমাতুল ওয়াদুদ ফি হল্লি সুনানে আবি দাউদ (আবু দাউদ শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।